সপ্তম ঘরে কেতু ও শুভফল লাভের উপায়।

easyastroo

কেতু ! এমন একটি নাম,যে নাম শুনলে সবার মধ্যেই কম বেশি ভয়ের বাতাবরণ কাজ করে।সৌর জগতে রাহু এবং কেতুর কোন অস্তিত্ব নেই।বৈদিক জ্যোতিষ শাস্ত্রে রাহু-কেতুকে ছায়া গ্রহের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে ।


সপ্তম ঘরে কেতু ও শুভফল লাভের উপায়।

রাহু-কেতু সৃষ্টির রহস্য

পৌরাণিক কথা অনুযায়ী ভগবান বিষ্ণু যখন দেবতাদের মধ্যে অমৃত বণ্টন করছিলেন,তখন স্বরভানু নামের রাক্ষস দেবতা সেজে চন্দ্র এবং সূর্যের মধ্যে দাঁড়িয়ে অমৃত  পান করে নিয়েছিলেন । ভগবান বিষ্ণুকে যখন এই কথাটি চন্দ্র এবং সূর্যদেব জানান,তখন ভগবান বিষ্ণু উনার সুদর্শন চক্রের মাধ্যমে স্বরভানুর গলা কেটে দেন।কিন্তু গলা কাটার আগেই  অমৃত খেয়ে ফেলায় উনি অমর হয়ে যান,শরীরের দুই টুকরো রূপে ।মাথা থেকে গলা পর্যন্ত একভাগ,যাকে আমরা রাহু নামে জানি এবং গলা থেকে পা পর্যন্ত দ্বিতীয় ভাগ যাকে আমরা কেতু নামে জানি।

চন্দ্র ও সূর্যদেব ভগবান বিষ্ণুকে স্বরভানুর  অমৃত পানের ঘটনা জানানোর কারণে উনার শরীরের দু-টুকরো হয়েছিল।সেজন্য স্বরভানু  বলেছিলেন যে সুযোগ পেলেই সূর্য এবং চন্দ্রের গায়ে গ্রহণ লাগাবেন।যেটা আজও চলছে সূর্য গ্রহণ ও চন্দ্র গ্রহণ নামে।আধুনিক সভ্যতা হয়তো বা এইকথাকে মানতে চাইবে না।কিন্তু প্রত্যেক সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের সময়ে গ্রহের অবস্থান যদি লক্ষ্য করেন,তাহলে দেখবেন যে সূর্য গ্রহণের সময় সূর্য হয়তো কেতুর একদম ক্লোজ ডিগ্রির মধ্যে,নয়তো রাহুর ক্লোজ ডিগ্রির মধ্যে থাকে।তেমনি চন্দ্রগ্রহণের সময় চন্দ্র,রাহু বা কেতুর ক্লোজ ডিগ্রির মধ্যে ।এককথায় সূর্য এবং চন্দ্র রাহু, কেতুর ক্লোজ ডিগ্রির মধ্যে এলেই সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্র গ্রহণ শুরু হয়।

জন্ম কুণ্ডুলীতে রাহুর-কেতু অস্তিত্ব

কুণ্ডুলী চক্রে রাহু-কেতুর নিজস্ব কোন ঘর নেই । রাহুকে কুম্ভ রাশির সহ অধিপতি এবং কেতুকে বৃশ্চিক রাশির সহ অধিপতি হিসাবে দেখা হয়।অনেকে বৃষ রাশিকে রাহুর উচ্চ্স্থ ঘর আবার অনেকে মিথুন রাশিকে এবং অনেকে বৃশ্চিক রাশিকে কেতুর উচ্চ্স্থ ঘর আবার অনেকে ধনু রাশিকে কেতুর উচ্চস্থ ঘর মানেন ।

মোক্ষের কারক কেতু

জ্যোতিষ শাস্ত্রে রাহু আর কেতুর মধ্যে কেতুকে আধ্যাত্মিকতার সাথে যুক্ত করে দেখা হয়।কেতুকে মোক্ষের কারক গ্রহ হিসাবে মানা হয়।আমরা যদি নিজেকে আধ্যাত্মিকতার সাথে যুক্ত করতে চাই,তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে শৃঙ্খলা,পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা,ধর্ম, ন্যায়-নীতির পালন করতে হয়।তবেই ঈশ্বরের সাথে যুক্ত হওয়া যায়  বা ঈশ্বরের সংস্পর্শে যাওয়া যায়।কেতু হলেন ঈশ্বরের সাথে যুক্ত হওয়ার মাধ্যম।কেতুর সাথে যুক্ত হতে হলে উপরিউক্ত বিষয়গুলি পূর্ণরূপে পালন করতে হয় ।

কেতুর শুভফল লাভের উপায়

জন্ম কুণ্ডুলীর সপ্তম ঘরে কেতু অবস্থান করলে,উক্ত ঘরের করণীয় কর্মক্ষেত্রে ধর্ম ও ন্যায়-নীতি পালনের মধ্যে দিয়ে কর্ম করলে শুভফল লাভ করা যায়।তথা আধ্যাত্মিকতার সাথে যুক্ত হয়ে চললে কেতুর শুভফল অর্জন করা যায়।বিবাহিত জীবনের কর্ম হোক বা ব্যবসা-বাণিজ্য বা দৈনন্দিন জীবনের যে কোন আদান-প্রদান, কর্মক্ষেত্রে ধর্ম-ন্যায়-নীতি এবং শৃঙ্খলা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা পালনের মধ্যে দিয়ে  কেতুর শুভফল  লাভ করতে পারেন।

সপ্তম ঘরে অবস্থান রত কেতুর সপ্তম দৃষ্টি পড়ে লগ্ন বা রাশিতে।তাই  উক্ত জাতক-জাতিকা  আধ্যাত্মিকতার সাথে যুক্ত হয়ে চলার মধ্যে দিয়ে কেতুর শুভফল এবং ঈশ্বরের সান্নিধ্য অর্জন করতে পারেন।

উপসংহার

অতএব সপ্তম ঘরে কেতু শুভ বা অশুভ  যে কোন অবস্থায়ই অবস্থান করুক না কেন কেতুর বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী চলার মধ্যে দিয়ে শুভফল অর্জন করা যায়।সেইসাথে কেতুর বীজমন্ত্র সহ অন্যান্য মন্ত্রপাঠ এবং ভগবান গণেশের আরাধনার মধ্যে দিয়ে শুভফল লাভ করা যায় ।

রো জানুন