লগ্ন বা রাশি হল আমাদের জীবন চক্রের মূল ভিত্তি।লগ্ন মানে শরীর,ব্যক্তিত্ব এবং রাশি মানে মন।শরীর এবং মনের উপর ভিত্তি করেই চলে আমাদের জীবন চক্র।শরীর এবং মন ভাল হলে আমাদের প্রত্যেকটি কর্ম,আমাদের ব্যবহার,আচার আচরণ সবকিছুই ভালো হয়।আর শরীর এবং মন ভালো না হলে কোনকিছুই ভালো হয় না।
মঙ্গল গ্রহের বৈশিষ্ট্য
সৌর জগতের চতুর্থ গ্রহ মঙ্গল একটি অগ্নিতত্ত্ব গ্রহ।মঙ্গল গ্রহ থেকে সাহস,পরাক্রম ও সংকল্পের বিচার করা হয়।মঙ্গলকে গ্রহদের সেনাপতি বলা হয়।স্বভাবতই সেনাপতি কর্মশক্তি সম্পন্ন না হলে সেনা পরিচালনা সম্ভব নয়।মঙ্গল থেকে জাতক-জাতিকার উচ্চাকাঙ্ক্ষা, যে কোন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার ক্ষমতার বিচার করা হয় ।জন্ম কুণ্ডুলীতে মঙ্গল বলবান হলে ব্যক্তি সাহসী,পরাক্রমী এবং নেতৃত্ব প্রদান করার ক্ষমতা যুক্ত হন।আর মঙ্গল কুণ্ডুলীতে মঙ্গল দূর্বল হলে উপরিউক্ত বিষয়গুলি ব্যক্তির মধ্যে কম পরিলক্ষিত হয় ।
কালপুরুষের কুণ্ডুলিতে মঙ্গলের অবস্থান
কালপুরুষের কুণ্ডুলীর হিসাব অনুযায়ী মঙ্গল কালপুরুষের প্রথম ও অষ্টম ঘরের অধিপতি।তথা মেষ ও বৃশ্চিক রাশির অধিপতি।মেষ রাশি থেকে কালপুরুষের ব্যক্তিত্ব,মন মানসিকতা ও মান -সম্মানের বিচার করা হয়।আর বৃশ্চিক রাশি থেকে কালপুরুষের দুঃখ-কষ্ট-যন্ত্রণা ইত্যাদির বিচার করা হয়।
লগ্ন বা রাশি,তাদের অধিপতি ও কারক সূর্য বা চন্দ্রের শুভাশুভ অবস্থান ও বলাবলের উপর নির্ভর করে নির্ধারিত হয় মঙ্গলের শুভাশুভ ফলের বিচার।লগ্ন বা রাশিতে স্বরাশি,মিত্র রাশি বা উচ্চরাশিতে শুভ প্রভাব যুক্ত হয়ে মঙ্গল অবস্থান করলে, জাতক-জাতিকা সাহসী,পরাক্রমী ও উচ্চাভিলাসী হন।এমন জাতক-জাতিকারা শৃঙ্খলা পরায়ন এবং কাজকর্মে দ্রুত পদক্ষেপে বিশ্বাসী হন।উপরিউক্ত ক্ষেত্রে অশুভ অশুভ গ্রহের প্রভাব যুক্ত হলে শুভ মঙ্গলের প্রভাব কম পরিলক্ষিত হয় ।
লগ্ন বা রাশি স্থানে অশুভ প্রভাবযুক্ত মঙ্গলের ফল
লগ্ন বা রাশিতে শত্রুরাশি বা নীচ রাশিতে মঙ্গল অবস্থান করলে এবং অশুভ গ্রহের প্রভাবযুক্ত হলে জাতক-জাতিকা রাগী, বদমেজাজী ও ঝগড়াটে হয়ে থাকেন। বিচার বিশ্লেষণ ছাড়া চট জলদি সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রবণতা তাদের মধ্যে দেখা যায়।অবশ্য শুভ গ্রহের প্রভাবে উপরিউক্ত বিষয়গুলির প্রবণতা কম হয়।
মঙ্গলের সাথে শনি রাহুর মত গ্রহের জ্যোতি ও ফলাফল
মঙ্গলের সাথে শনি, রাহুর মত মঙ্গলের বৈশিষ্ট্যের সাথে মিল নেই গ্রহের সংযুক্ততায় মঙ্গলের নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের হানি ঘটে।যেমন-লগ্ন বা রাশিতে অবস্থান রত মঙ্গলের প্রভাবযুক্ত জাতক-জাতিকারা তাদের উপর অন্যের নিয়ন্ত্রণ মেনে নিতে পারেন না।যদি তাদের ব্যক্তিত্বের সাথে সেই ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের মিল না থাকে ।
যদি জোর করে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হয়,তাহলে মঙ্গলের অগ্নিতত্ত্ব প্রভাবের কারণে সেই নিয়ন্ত্রণ সহ্য করতে না পেরে কোন একটা সময় ধৈর্য্যচুত্য হয়ে যান।ফলস্বরুপ রাগের বহিঃপ্রকাশ ঘটে।অনেক সময় সেই রাগের দ্বারা অনেক অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটতে দেখা যায়।ধৈর্য্য হারানোর কারণে অন্যের ক্ষতির সাথে মঙ্গলের প্রভাব যুক্ত জাতক-জাতিকারা নিজেরও ক্ষতি করে ফেলেন ।
শত্রু ও নীচ রাশিতে মঙ্গলের অবস্থান ফল
শত্রু রাশিতে অবস্থান করা কথার অর্থ হল কোন ব্যক্তি যে জায়গায় কাজ করে, সেই জায়গার মালিকের সাথে সেই ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের মিল না থাকা।আর নীচ রাশির অর্থ হল ব্যক্তি যে স্থানে কাজ করে,সেই স্থানের ব্যক্তির বৈশিষ্ট্যের সাথে মিল না থাকা।তাই অশুভ বা পাপ প্রভাব যুক্ত মঙ্গল লগ্ন বা রাশিতে অবস্থান করা জাতক-জাতিকাদের জীবনে যতই সমস্যা আসুক,কখনও ধৈর্য্য হারাতে নেই।ধৈর্য্য না হারিয়ে পরিস্থিতি যেমন পর্যায়ের হোক নিজেকে শান্ত রাখতে হয়।ধীর স্থিরভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হয়, যাতে পরিস্থিতি নিজের অনুকূলে আনা যায় ।
মঙ্গলের শুভফল পাওয়ার উপায়
লগ্ন বা রাশি স্থানে পাপ প্রভাব যুক্ত মঙ্গলের জাতক-জাতিকাদের মঙ্গলের শুভফল প্রাপ্তির যথেষ্ট কিছু উপায় রয়েছে।যেগুলি অবলম্বন করলে মঙ্গলের দুষ্প্রভাবকে কাটিয়ে সুপ্রভাব লাভ করা যায়।
সেই উপায়গুলির মধ্যে প্রথমেই যে বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যায়, সেটা হল-মঙ্গল হল শৃঙ্খলার কারক গ্রহ।মঙ্গল লগ্নে অবস্থান করা জাতক-জাতিকাদের জীবনে শৃঙ্খলাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে চলা উচিত।জীবনের প্রত্যেকটা কর্মে তারা শৃঙ্খলাকে প্রাধান্য দিয়ে চললে মঙ্গলের শুভফল অর্জন করতে পারেন।সেই সাথে কর্মক্ষেত্রে ধর্ম,ন্যায়-নীতি ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাকে গুরুত্ব দিয়ে চলা।
জন্ম কুণ্ডুলীতে মঙ্গল অধিক অশুভ প্রভাবযুক্ত হলে আমিষ জাতীয় ও নেশা জাতীয় খাবার বর্জন করা শুভফল দায়ী।সেইসাথে মঙ্গলের বীজমন্ত্র,হনুমান চালিসা সহ অন্যান্য মন্ত্র পাঠ এবং মাদুর্গা ও বজরাংবলীর আরাধনায় শুভফল লাভ করা যায়।
উপসংহার
সবশেষে বলা যায় জন্ম কুণ্ডুলীতে মঙ্গল শুভ বা অশুভ যে ভাবেই অবস্থান করুক না কেন,মঙ্গলের বৈশিষ্ট্যের সাথে যুক্ত হয়ে চলার মধ্যে দিয়ে শুভফল লাভ করা যায়।
জ্যোতিষ শাস্ত্র সম্বন্ধীয় বিষয় জানতে আরো পড়ুন